সৈয়দপুর শহরের পথে পথে ঘুরে বেড়ানো মানসিক ভারসাম্যহীন মো: গনিকে দেখে কেউ ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি, মোটা কাপড়ের আড়ালে লুকিয়ে আছে লক্ষ লক্ষ টাকা। ঝড়-বৃষ্টি-রোদ-শীত উপেক্ষা করে যিনি দিনাতিপাত করতেন, তার কাপড়ের পোঁটলায় আর শরীরে লুকানো অবস্থায় পাওয়া গেছে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৫২ টাকা এবং আরও কিছু ছেঁড়া টাকা। মানবতার সেবায় নিয়োজিত এক সংগঠনের কর্মীরা তাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে গিয়েই এই বিশাল অর্থের সন্ধান পান।
সৈয়দপুর শহরের জিআরপি মোড় থেকে স্টেশন রোডে মো: গনি ছিলেন এক পরিচিত মুখ। শান্ত স্বভাবের এই মানুষটি কখনো কাউকে বিরক্ত করতেন না। তার পোশাক ছিল সবসময়ই মোটা কাপড় আর কাপড়ের ব্যাগে মোড়ানো, যা তার জীবনযাত্রার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
গত ১৪ জুন (শনিবার), হিউম্যানিটি বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠনের সমাজকর্মী জয়নাল আবেদীন রাজিব ও মাইনুল ইসলাম যখন মানবিকতার হাত বাড়িয়ে তাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে দিচ্ছিলেন, তখনই বেরিয়ে আসে এই অভাবনীয় সত্য। গনির কাপড়ের পোঁটলা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে লুকানো অবস্থায় এই বিপুল পরিমাণ টাকা দেখে বিস্মিত হন উপস্থিত সবাই।
বর্তমানে সমস্ত টাকা সৈয়দপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার কার্যালয়ের সমাজকর্মী রশিদুল ইসলামের কাছে গচ্ছিত রাখা হয়েছে। এই অর্থ গনির ভবিষ্যতের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, তা সময়ই বলে দেবে।
মো. গনি নিজেই জানিয়েছেন, তার বাড়ি রংপুর জেলার আলমনগর এলাকায়। এই ঘটনার পর তার পরিবারের খোঁজখবর নেওয়ার এবং তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনা কেবল একটি মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের জীবন পরিবর্তনের গল্প নয়, এটি মানবতার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। হিউম্যানিটি বাংলাদেশ-এর মতো সংগঠনগুলোর নিঃস্বার্থ সেবা এবং সমাজকর্মীদের প্রচেষ্টা প্রমাণ করে যে, সমাজে এখনও মানবিকতা ও সহানুভূতির জয়গান চলছে। গনির এই ঘটনা সমাজের অবহেলিত মানুষদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে এবং তাদের পাশে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা যোগাবে, এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন