রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের যমুনেশ্বরী নদীর তীরে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহ্যবাহী বালুয়া উচ্চ বিদ্যালয়। বৃটিশ আমলে স্থাপিত এই বিদ্যালয়টি নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজও জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে।
প্রতিষ্ঠার সময় বিদ্যালয়টি জমিদার মহারাজ বাহাদুর সিং-এর স্ত্রী কুসুম কুমারীর নামে "কে কে এম ই স্কুল" (KKME School) নামে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে কুসুম কুমারীর প্রয়াণের পর, ১৯৪২ সালে মহারাজ বাহাদুর সিং-এর পুত্র তাজ বাহাদুর সিং-এর স্ত্রী রাণী লসমি কুমারীর নামে বিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয় "আর এল কে হাই স্কুল" (RLK High School)। সময়ের সাথে সাথে বিদ্যালয়টি তার ঐতিহাসিক নাম পরিবর্তন করে বর্তমানের "বালুয়া উচ্চ বিদ্যালয়" নামে পরিচিতি লাভ করে এবং সেই নামেই আজও স্বমহিমায় টিকে আছে।
বিদ্যালয়ের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় রচিত হয়েছিল ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যায়। প্রলয়ংকরী যমুনেশ্বরী নদীর ভাঙনে বিদ্যালয় ভবন সম্পূর্ণভাবে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। তবে স্থানীয় দানবীর ব্যক্তি ও এলাকাবাসীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়টিকে নদী থেকে কয়েক শত মিটার দূরে নতুন স্থানে স্থানান্তর করা সম্ভব হয়। সকলের সম্মিলিত উদ্যোগে বিদ্যালয়টি পুনরায় তার কার্যক্রম শুরু করে এবং এলাকার শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে থাকে।
দীর্ঘ পথচলায় বালুয়া উচ্চ বিদ্যালয় বহু জ্ঞানী ও গুণী ব্যক্তিত্ব তৈরি করেছে, যারা দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পরিচালনা পর্ষদ শিক্ষার গুণগত মান বজায় রাখতে সর্বদা সচেষ্ট রয়েছেন। আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতির সাথে ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধের সমন্বয়ে এই বিদ্যালয় আজও এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত।
স্থানীয়রা মনে করেন, বালুয়া উচ্চ বিদ্যালয় শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই নয়, এটি এই অঞ্চলের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক। বিদ্যালয়ের দীর্ঘ এবং সংগ্রামী পথচলা আগামী প্রজন্মকে অধ্যবসায় ও ঐক্যের মাধ্যমে যেকোনো প্রতিকূলতা মোকাবিলা করার অনুপ্রেরণা যোগাবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন