উত্তর বাংলা ২৪বিডি ডেস্কঃ
বগুড়ায় ডিবি পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় হাবিবুর রহমান হাবিব (৩৬) নামে এক উকিল সহকারী (মুহুরি) মরণ হয়েছে। মুহুরি হাবিবুরের স্বজনদের দাবি, ডিবি পুলিশের শারিরীক ও মানসিক নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে ৬ টার দিকে বগুড়া জেলা জজ ও দায়রা জজ আদালতের সামনে থেকে জেলা ডিবি পুলিশ হাবিবুরকে আটক করে। হাবিবুর রহমান বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলার জোড়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে। পেশায় উনি বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ উকিল সহকারী ছিলেন ও জেলা সহকারী সমিতির সহ সাধারণ সম্পাদক। বগুড়া ডিবি পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আটকের পর হাবিবুর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসাপাতালে নেওয়া হয়। ওই স্থান রাত পৌনে ৯ টার দিকে চিকিৎসাধীন পরিস্থিতিতে উনি মারা যান। পরে রাত সাড়ে ১১ টার দিকে হাবিবুরের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নেওয়া হয়। মৃত হাবিবুরের মামা ও উকিল মঞ্জুরুল হক বলেন, সন্ধ্যার পর ডিবি পুলিশ সাদা পোষাকে বিনা ওয়ারেন্টে হাবিবুরকে আটক করে নিয়ে যায়। তার খোঁজ করার জন্য থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের নিকট একাধিকবার ধর্ণা দিয়েও কোন তথ্য পাওয়া যায়নি৷ পরে এক সিনিয়র উকিল আমাকে শিওর করেন হাবিবুর ডিবি পুলিশের হেফাজতে আছে। তার কিছুক্ষণ পরে তিনিই আমাকে হাবিবুরের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তার মাধ্যমে খবর পেয়ে ডাক্তারখানায় এসে হাবিবুরের অটল শরীর দেখতে পাই। উকিল মঞ্জুরুল হক আরও বলেন, হাবিবুর আমার সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। সারাদিন সুস্থভাবে কাজ করা মানুষটা আটকের পরে হুট করেই মারা গেল? তাকে ডিবি পুলিশের শারিরীক ও মানষিক নির্যাতন করে হত্যা করেছে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও ডিবি পুলিশের দায়িদের বিচার চাই। বগুড়া ডিবি পুলিশ সূত্র এইরকম জানায়, গত ২ আগস্ট শাজাহানপুর থানার জোড়া গ্রামে ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধা খুকি বেওয়া নিখোঁজ হন। ৪ আগস্ট গ্রামের ১টি জলাশয়ে তার বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করা হয়। এ সময় লাশের দুই পা বিচ্ছিন্ন করা হলেও লাশ উদ্ধারের টাইম একটি পা পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার দুপুরে সেইম গ্রামের মনোয়ারা বেওয়ার বাড়ির সেপটিক ট্যাংক হতে ছোট মেয়ে বেওয়ার বিচ্ছিন্ন ১টি পা উদ্ধার করা হয়। ডিবি পুলিশ তাকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে হাবিবুরের নাম উঠে আসে। হাবিবুর ২০১৩ সালে খুকি বেওয়ার সৎ ছেলে ব্যাপক হত্যা মামলার আসামি। ওই মামলার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী ও দ্রষ্টা ছিলেন বেওয়া। এ ব্যপারে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার জানান, একটি হত্যা মামলায় হাবিবুরের সংশ্লিষ্টতার প্রুফ পেয়ে ডিবি পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। তবে কার্যালয়ে আনার পরপরই উনি অসুস্থ বোধ করলে তাৎক্ষণিক ক্লিনিকে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাবিবুরের মৃত্যু হয়েছে। তাকে অত্যাচারের কোন ঘটনা ঘটেনি। তারপরও যদি কারও খটকা থাকে লাশ ময়নাতদন্তে সব বেরিয়ে আসবে৷ এ বিষয়ে সরকারী মোহাম্মদ আলী হাসাপাতালের আবাসিক সেবা অফিসার (আরএমও) ডা. শফিক আমিন কাজল বলেন, ডিবি পুলিশ হাবিবকে সংজ্ঞাহীন সিচুয়েশনে সন্ধ্যার ৭ টার দিকে ক্লিনিকে নিয়ে আসে। ওখান তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। কিন্তু শরীরে অক্সিজেনের মাত্র এসে রাত পৌনে ৯ টার দিকে হাবিবুরের মরণ হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন