উন্নয়নবৈষম্যে রংপুর, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বিশাল বৈষম্যের শিকার রংপুর অঞ্চলের মানুষ।

মোঃ সুজা উদ্দিনঃ


দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে  ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বিশাল বৈষম্যের শিকার রংপুর অঞ্চলের মানুষ।
অন্যান্য সিটি করপোরেশনের বাজেট শতশত কোটি টাকা হলেও রংপুর সিটি করপোরেশনের বাজেট ০০ টাকা। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের  বাজেট শতশত কোটি কিন্তু, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট মাত্র ১ লাখ টাকা। রংপুর মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই কোনো বরাদ্দ। এবারের বাজেটে সড়ক যোগাযোগে  ৩৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে,যেখানে রংপুর বিভাগে দেওয়া হয়েছে মাত্র ২০০ কোটি।
অন্যান্য অর্থনৈতিক অঞ্চলের বরাদ্দ  শতশত কোটি হলেও রংপুর বিভাগের নীলফামারী,পঞ্চগড়,দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম অর্থনৈতিক অঞ্চলের কোনো বরাদ্দ নেই। শিল্প ও কৃষিতেও নেই উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ।
রংপুর অঞ্চলের মানুষের প্রতি সরকারের এতো বৈষম্য কেন?
মনে হচ্ছে, রংপুর বিভাগের অনুন্নয়নের নেপথ্যে ‘রাজনীতি’ একটি বড় কারণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুরের পুত্রবধূ। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বাড়ি রংপুর। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বাড়ি দিনাজপুর। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, এ তিনজন বরেণ্য নেতা থাকার পরও রংপুর দুর্দশাগ্রস্ত। যে সরকারই দেশ পরিচালনায় থাকুক না কেন, রংপুরের উন্নয়নবৈষম্যের প্রতি সবাই বেখেয়ালি। তবে যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করতে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কটি ছয় লেনে সম্প্রসারণের কাজ বর্তমান সরকারের একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। সেই সঙ্গে বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর গ্যাস পাইপলাইন, রংপুর অঞ্চলে শিল্পবিপ্লব ঘটবে বলে আশা করা যায়। কিন্তু এ বিভাগে বাজেট বাড়িয়ে নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে না তুললে, এসবই অশ্বডিম্ব প্রসব করার মতোই হবে। রংপুর অঞ্চলের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে হলে, শিল্পায়নের কোনো বিকল্প নেই। এই অঞ্চলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে আলাদা শিল্পনীতি, ঋণনীতি, ট্যাক্স হলিডের মেয়াদ বৃদ্ধি, কর ও ভ্যাটনীতি প্রণয়ন একান্ত জরুরি।
ইতিহাস ভুলে গেলে অন্যায় হবে। ঐতিহাসিক অনেক আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল রংপুরের জনপদ থেকেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহান মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন যে কয়েকটি কারণে, তার মধ্যে অন্যতম বৈষম্য দূর করা। অথচ দেশের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা অঞ্চলের বৈষম্য দূরীকরণে আমরা কোনো নেতা পেলাম না! রংপুর সিটি করপোরেশন বলা চলে নতুন। এখানে নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি করতে হলে বিশেষ বরাদ্দ প্রয়োজন। সেই বিশেষ বরাদ্দ তো দূরের কথা, সাধারণ বরাদ্দও সবচেয়ে কম এখানকার জন্য। দেশের খাদ্য জোগানদাতা হিসেবে নাম থাকবে রংপুর বিভাগের। কিন্তু উন্নয়নের তলানিতে পড়ে থাকবে কতদিন? আমাদের পূর্বপুরুষ এবং বর্তমান প্রজন্ম যে দীর্ঘ বৈষম্যপূর্ণ সময় পার করে এসেছে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মও কি সেই বৈষম্য দেখতেই থাকবে? সরকার কি আমাদের নয়!

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন