মিঠাপুকুরে ওজারুল মিয়ার ‘জামাই পায়েস’



রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ১১ নং বড়বালা ইউনিয়নের পূর্ব বড়বালা গ্রামের বাসিন্দা ওজারুল মিয়া। বয়স প্রায় সত্তরের কোঠায়। দীর্ঘ ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে সাইকেলে করে ফেরি করে চলেছেন এক বিশেষ ধরনের চাল। এই চালের নাম "কাউনের চাল", তবে তার কাছে এর অন্য একটি নামও আছে - "জামাই পায়েস"।

কাউনের চাল একসময় গ্রামেগঞ্জে প্রচলিত এক বিনিময় প্রথা ছিল। শস্যের বিনিময়ে এই চাল পাওয়া যেত। সময়ের সাথে সাথে সেই প্রথা পাল্টেছে, তবে ওজারুল মিয়ার ব্যবসা আজও চলছে। বর্তমানে তিনি প্রতি কেজি কাউনের চাল বিক্রি করছেন ১৫০ টাকা দরে।

শুরুর দিকে ওজারুল মিয়া তার সাইকেল নিয়ে পায়ে হেঁটে গ্রামের মেঠো পথে ঘুরতেন। মুখে মুখে নানান ছন্দ আর গান গেয়ে ক্রেতাদের ডাকতেন। বয়সের ভারে এখন তার সেই জোরালো কণ্ঠ আর নেই। তাই তিনি তার বাইসাইকেলে একটি ছোট মাইক লাগিয়ে নিয়েছেন। মাইকে বেজে চলে নানান ছন্দ- "কাউনের চাউল রে কাউনের চাউল, জামাই পায়েস, দাদা-দাদী পায়েস।"

কিন্তু কেন এর নাম "জামাই পায়েস"? ওজারুল মিয়ার কাছ থেকে জানা যায়, আগেকার দিনে গ্রামে জামাই বা কোনো অতিথি আসলে তাদের আপ্যায়নের জন্য বিশেষ ধরনের খাবারের ব্যবস্থা করা হতো। সেইসব খাবারের মধ্যে কাউনের চালের পায়েস ছিল অন্যতম। সেই থেকেই এই চালের নাম "জামাই পায়েস" হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

এই বয়সেও ওজারুল মিয়া তার ছোট্ট সংসারটি চালাচ্ছেন এই ব্যবসা দিয়েই। তার বাইসাইকেলের চাকার সাথে সাথে চলছে জীবনের চাকা, যা আজও থামেনি। তার এই প্রচেষ্টা শুধু একটি ব্যবসার গল্প নয়, এটি গ্রামীণ ঐতিহ্য আর জীবন সংগ্রামের এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন