উত্তরবাংলা ২৪ বিডি ডেস্ক:
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে বর্তমান বিপন্ন লিস্টে ডাহুক পাখি।মাঝারি আকৃতির জলের পক্ষি ডাহুক। ডাহুক প্রচুর সতর্ক পাখি। আত্মগোপনে পারদর্শী। এই পাখিটি অনেক ভীরু বলেই কি এত সুন্দর?ভালোবাসার উদ্ভাসিত দৃষ্টান্তও বলা যায় ডাহুক কে।প্রাণী কূলের গভীরতম প্রেমাবেগের জুটির নাম ডাহুক -ডাহুকী। কবিকুল তাকে ভালোবাসার নিঃস্বার্থ প্রহেলিকা বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। লেখক জীবনানন্দ অনুগত এই ডাহুক পাখি নিয়ে লিখেছেন, “মালঞ্চে পুষ্পিতা অবনতামুখী,নিদাঘের রৌদ্রতাপে কেবল সে ডাহুকী।বিজন-তরুণ শাখে ডেকে আনে ধীরে সন্তপর্ণে বনচ্ছায়া- অন্তরালে গলিত তিমিরে”।
কবি আল মাহমুদের কবিতাতেও এই বর্ণিল পক্ষির কাব্যময় উপস্থিতি রয়েছে।হায় আফসোস! অনেকটা নগরায়নের ফলে দিনকে দিন বিলিন হয়ে যাচ্ছে এ পাখি।
উপজেলার গলাচিপা গ্রামের পক্ষি প্রেমী শাহ আলম বলেন,আসলে পাখিটি চিরবিরহী প্রকৃতির। জলচর ডাহুক-ডাহুকির ভালোবাসার পদ্য অনেকটা আরব্য উপন্যাসের লাইলী-মজনু, শিরি-ফরহাদ, রজকিনী-দন্ডিদাস, আনারকলি- সেলিম কিম্বা দেবদাস-পার্বতীর মতোই। বন-বাদাড়ে ঘুরে বেড়ানো এই ডাহুক- ডাহুকী শাশ্বত পলিটনিক (দেহাতীত) ভালোবাসার প্রতীক। সঙ্গীহীন হলে এরা পাগল হয়ে যায়। ডাহুক হারালে ডাহুকী দিনরাত ডাকতে ডাকতে ঘাড়সমেত মাথা চিরে রক্ত উঠে এক সময় মৃত্যুর কোলো ঢলে পড়ে। সঙ্গী ছাড়া এক মোমেন্ট নয়। কি অবাক ও মর্মান্তিক পাখি ডাহুক!তাই বুঝি বিদ্যাপতি, চন্ডিদাস, ফররুখ আহম্মেদ, জীবনানন্দ, আল মাহমুদের কবিতার অলংকার হয়ে গিয়েছে ডাহুক পাখি।
যুগ যুগ ধরে হোসেনপুরের নদ-নদী, খাল, বিল-ঝিল, ডোবা, নালা-দীঘির পাশের ঝোপঝাড়ে দল বেঁধে বাস করতো ডাহুক পাখি। তবুও সম্প্রতি খুঁজে পাওয়াটা দুষ্কর।
হোসেনপুর মেয়ে ডিগ্রী কলেজের অধ্যাপক আশরাফ আহমেদ বলেন, ডাহুক অনেকটা বিপন্ন হয়ে যাচ্ছে। মাঝে ভিতরে লক্ষ্য যায়। ঝোপঝাড় ধ্বংসের ফলে ডাহুকের আধুনিক সিচুয়েশন অতিশয় অধিক বেশ ভালো নয়। প্রকৃতিতে এদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য নিশ্চয়ই এদের বসতি ধ্বংস অফ করার জন্য হবে। তা না হলে সেদিন আর বেশি দূরে নয় যেদিন বিপন্নের লাল লিস্টে লেখা হবে ডাহুক পক্ষির নাম।
এ ব্যাপারে থানা মেয়ে ভাইস-চেয়ারম্যান রৌশনারা রুনু বলেন,গ্রামাঞ্চলের পুকুর ও নদীর পাড়ের অথবা ঝোপঝাড়ে সন্ধ্যেবেলা ডাহুকের ডাক শোনা যেত। অতল রাতেও ডাহুকের ডেকে আনে অনেকের নিদ্রা ভাঙতো। কিন্তু এখনকার দিনে আর ডাহুকের কণ্ঠ শোনা যায় না। একসময় বর্ষা ও শরতে ডাহুকরা বাড়ির গৃহপালিত হাঁস মুরগির সঙ্গে বেড়াতো। অধুনা আর তাদের আনাগোনা দেখা যায় না। নয়নে পড়ে না। ডাহুক পক্ষি ইদানিং হারিয়ে যেতে শুরু করেছে।
জানা যায়- বর্ষাকাল এদের প্রজনন ঋতু। এসময় তারা পানির কাছেই ঝোপঝাড়ের ভেতরে পক্ষান্তরে ছোট গাছের ঝোপযুক্ত ডালে থাকার জায়গা করে। সিকিউরিটি ঠিকঠাক থাকলে মাটিতেও থাকার জায়গা করে এই পাখি। ৫-৭টি ডিম পাড়ে এরা, ডিমের রং ফিঁকে হলুদ বা গোলাপি মেশানো সাদা। ডাহুক-ডাহুকি দু’জন মিলেই ডিমে তা দেয়। বাচ্চার রং সব টাইম হয় কালো। ডিম ফোটে প্রায় ২১-২৪ দিনে। আর ২৪-৩০ ঘণ্টা পরই বাচ্চারা বাসা ছাড়ে। মাস তিনেক পরে বাচ্চারা আলাদা জীবন বেছে নেয়। প্রজননের সময় একটি পুরুষ ডাহুক অন্য ১টি পুরুষ ডাহুককে সহ্য করতে পারে না। দেখলেই তারা মারামারি করে। এই পাখি লড়াকু প্রকৃতিরও।
হোসেনপুর থানা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা: মো. আলোকিত হোসাইন বলেন, ডাহুকের সুপ্রিম খাদ্য জলজ পোকামাকড় ও কীটপতঙ্গ। এছাড়া শাপলা-পদ্ম ফুলের নরম অংশ, কচি পানিফল, জলজ শেওলা, লতাগুল্মের নরম অংশ, ধান, কাউন, ডাল, সরিষা, শামুক, কেঁচো, জোঁক, মাছ, ছোট মাছ, শাকসবজি ও ফল খেয়ে থাকে। পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে লক্ষ্য যায়।বর্তমানে তাদের আবাস্থল বিনাশ হচ্ছে। আহার ঘাপলা ও প্রজননকালীন সময়ে শিকারীদের উৎপাতসহ নানা কারণে হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশবান্ধব এ প্রজাতির পাখি। শিকারিদের হাত থেকে সম্পন্ন পর্যন্ত রক্ষা পাচ্ছে না অতল বনজঙ্গলে বসবাসকারী ডাহুক খেচর গুলো। প্রকৃতিকে অনেক ভালো রাখার জন্য পাখ-পাখালিকে সিকিউরিটি দেওয়ার জন্য হবে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন