উত্তর বাংলা ২৪বিডি ডেস্ক:
শীত এলেই বাঙালির মনে পড়ে শীতের পিঠার কথা। পিঠা ব্যতীত বাংলা যেন পরিপূর্ণ হয় না। ঐতিহ্যবাহী শীতের বাহারি পিঠা খাওয়ার রীতি বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতির একটি অংশ। একসময় পাড়ায়-পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায়,গ্রামে-গ্রামে ছোট-বড় সবাই পিঠা খাওয়ার খুশিতে মেতে উঠতো। অথচ ইদানিং তা আর তেমন চোখেই পড়েনা। কর্মচাঞ্চল্য এই ব্যস্তময় জীবনে তা আজকাল অনেকটাই হারিয়ে গেছে বা যাওয়ার পথে।
এক-কালে যতই শীত বাড়তো ততোই যেন মানুষের পিঠা বানানোর ব্যস্ততা বেড়েই চলতো। বাংলার প্রত্যেকটি গ্রামে-গ্রামে,ঘরে-ঘরে বিচিত্র পিঠা তৈরির উৎসবে মেতে উঠতো গৃহস্থ বাড়ির গৃহিণীরা। সে সময় শিশু-কিশোররা হতো খুশিতে আত্নহারা। প্রস্তুত পিঠার একটা অংশ পাঠানো হতো নিকট আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতেও।
অথচ শীতের পিঠা বানানোর ধুমধাম আয়োজন পাড়া-গাঁয়ে আর চোখেই পড়ে না আগের মতো। আত্মীয়-স্বজন রয়েছে পূর্বের মতোই, নেই কেবল মধুর সম্পর্ক। মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পেলেও কমেনি মনের সংকীর্ণতা। সকলেই যেন আত্মকেন্দ্রিক, কেউ কারও খোঁজ রাখতে চায় না। সময়ের সাথে সাথে বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবনযাত্রা, বদলে যাচ্ছে রুচি। হারিয়ে যাচ্ছে পিঠা তৈরির সেসব উৎসবমুখর আমেজ।
শীতকালে নতুন ধান উঠতো। সেই ধানে ঘরে ঘরে পিঠা বানানোর উৎসব আরম্ভ হতো। নতুন চালের গুঁড়া আর খেজুর রস বা আখের গুড় দিয়ে বানানো হতো নানা রকম পিঠা। সেগুলোর নানা রকম নাম, নানা রকম রূপের বাহার। ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, পুলি পিঠা, পাটিসাপটা পিঠা ছাড়া এইরকম হরেক রকম পিঠা প্রস্তুত হতো বাংলার প্রতিটি গ্রামে-গ্রামে, ঘরে-ঘরে। পায়েস, ক্ষীর প্রভৃতি মুখরোচক খাদ্য আমাদের রসনাকে তৃপ্ত করতো শীতকালে। সেসময় গ্রামের বাড়িগুলো নতুন অতিথিদের আগমনে মুখর হয়ে ওঠতো। শীতের প্রভাতকালে চুলার পাশে বসে গরম গরম ভাপা পিঠা খাওয়ার মজাই ছিলো আলাদা। পিঠা বাঙালি সংস্কৃতির একটি সেরা উপাদান। আর শীতের পিঠা আমাদের খাদ্যতালিকায় এনেছে বৈচিত্র্য।
কালের বিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতিগুলো একে একে হারিয়ে যাচ্ছে। গ্রামের গৃহিণীদের ভিতরে পূর্বের মত পিঠা বানানোর উৎসব নেই। আমাদের নতুন প্রজন্ম হতে হারিয়ে যাচ্ছে পিঠা। সম্প্রতি পিঠা বানানোটা অনেকটা স্মৃতি হয়ে গেছে। পূর্বের সেই পিঠা বানানোর দিনগুলো হারিয়ে গেছে অনেকদিন আগেই।
শীত মৌসুমে নিজ নিজ বাড়িতে সুনির্দিষ্ট দিনে বা মাঝে মাঝে পিঠা উৎসবের আয়োজন করা গেলে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসব অথবা শীতের পিঠা ফিরে পাবে তার হারানো গৌরব।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন