শীতকালে ঠোঁট ফাটার সমস্যা ও প্রতিকার

উত্তর বাংলা ২৪বিডি ডেস্কঃ

শীতের টাইম ঘনিয়ে আসছে। আজকাল থেকেই শুকিয়ে চামড়ায় ঝোঁক পড়ছে। মুখে পাতলা ময়েশ্চারাইজার মাখতেই হচ্ছে। আর কিছুদিন পর হতে বেছে নিতে হবে ভারী ময়েশ্চারাইজার। তা সত্ত্বেও কেবল লিপ বাম প্রয়োগ করে ঠোঁট ফাটার সমস্যাকে এড়ানো যায় না। 

শীতের শুষ্ক ও ঠাণ্ডা আবহাওয়ার ইফেক্ট কেবলমাত্র শরীরের ওপরই পড়ে না,ঠোঁটের ওপরও পড়ে ভীষণভাবে। এতে এ টাইম নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবারই ঠোঁট শুষ্ক থাকে তার সাথে ঠোঁট ফাটতে লক্ষ্য যায়। অনেকের আবার শুধুমাত্র শীতকালই নয়, সারা বছরে ঠোঁট শুষ্ক থাকে ও ফাটে।

ঠোঁট ফেটে যাওয়া কোনো হতাশাজনক ঘটনা নয়। কিন্তু অধিকাংশই ঠোঁট ফেটে যাওয়াকে স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারে না। তারা ডাক্তারি উপদেশ নেওয়ার ডিসিশন গ্রহণ করে ফেলে। আবার অধিকাংশই ঠোঁট ফেটে যাওয়া বন্ধ করতে ঠোঁটের আলাদা যত্ন নিতে আরম্ভ করেন, যার বেশীরভাগই বিফলে যায়।

সিবেসিয়াস গ্রন্থি(Sebaceous glands) নামক আণুবীক্ষণিক এক্সক্রনিক গ্রন্থি আছে আমাদের ত্বকে বা চামড়ায়। যা হতে একধরনের তৈলাক্ত(মেদ) বা মোমের মত রস ক্ষরিত হয় যাকে বলে সিবাম(sebum), যা আমাদের ঘামের সঙ্গে মিশে অবিরাম চামড়ায় ছড়িয়ে যায় তার সাথে চামড়াকে মসৃণ ও জলরোধী রাখে। এর ফলে চামড়া ফাটে না।

কিন্তু শীতকালে বায়ুতে জলীয় বাষ্পের সংখ্যা হ্রাস পায় যাবার ফলে আমাদের ঘাম কম হয়। যার কারনে সিবেসিয়াস গ্রন্থি হতে বেরিয়ে আসা তেলতেলে পদার্থ দেহের চামড়ায় ঠিকমতো ছড়িয়ে পড়তে পারে না। দেহের শুকনো জায়গাগুলো সেই সময় কুঁচকে গিয়ে ফেটে যায়। দেহের অন্য জায়গার তুলনায় আমাদের ঠোঁটের চামড়া পাতলা। তাছাড়া ঠোঁটের অবস্থান নাকের সঠিক পাদদেশে থাকার জন্য নিশ্বাসের সঙ্গে বেরিয়ে আসা উত্তাপ বায়ু ঠোঁট দুটোকে এইরকম শুকিয়ে দেয়। যার কারনে দেহের অন্য জায়গার তুলনায় বেশী ফাটে।

ঠোঁট ফাটার অন্যতম আরেকটি রিজন হলো ঠোঁট ও দেহে আর্দ্রতার ভারসাম্যের অভাব। শীতকালে বায়ুতে আর্দ্রতা কম থাকে বলে ঠোঁট আর্দ্রতা হারায় অত্যন্ত তাড়াতাড়ি। স্মরণ করে দেখবেন, কোনো কারণে দেহ পানিশূন্য হয়ে পড়লে যে কোনো ঋতুতেই উপরের ঠোঁট ফেটে থাকে আমাদের। শীতের পূর্বের মৌসুমী ঠান্ডা বায়ু ছাড়াও এইরকম কতিপয় বিষয় আছে, যা ঠোঁট ফাটাকে ত্বরান্বিত করে বা বাড়িয়ে দেয়। যেমন বারবার জিব দিয়ে ঠোঁট চাটার অভ্যেস, পুষ্টিহীনতা ও ভিটামিনের অভাব, তীব্র সূয্যির তাপ ও পানিশূন্যতা, নানারকম শ্রেনীভেদ প্রতিষেধক সেবন।

শীত মৌসুমে ঠোঁট ফাটার প্রবলেম কীভাবে এড়াবেন?

১) বারবার ঠোঁটে জিভ লাগাবেন না। এটি আপনার ঠোঁটের আর্দ্রতা কেড়ে নেয় এবং ঠোঁটকে শুষ্ক করে দেয়। তাছাড়া সালভিয়ার মধ্যে যে উৎসেচক রয়েছে, যা খাবার হজমের জন্য। তবুও এটা ঠোঁটের সংস্পর্শে এলে অস্বস্তি সৃষ্টি করে।

২) এরূপ কোনো লিপ বাম প্রয়োগ করবেন না, যার ভিতরে কর্পূর, ইউক্যালিপটাস ও মেনথলের মতো উপকরণ রয়েছে। এই ধরনের উপাদানগুলো ঠোঁটকে শুষ্ক করে দেয় এবং ঠোঁটের সিচুয়েশন এইরকম মন্দ করে দেয়।

৩) ফাটা ঠোঁটের  না নিলে এখান হতে সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। একারণে ঠাণ্ডা পড়ার আগে থেকেই ঠোঁটের কদর নিন। ঠোঁট অন্যান্য ভাগের ত্বকের তুলনায় ফাস্ট শুকিয়ে যায়। একারণে ঠোঁটে সকাল-বিকেল লিপ বাম লাগিয়ে রাখুন।

৪) পেট্রোলিয়াম জেল, এসেনশিয়াল অয়েল বা গ্লিসারিন রয়েছে, এরূপ লিপ বাম প্রয়োগ করুন। এই সব উপাদানগুলো আপনার ঠোঁটকে দীর্ঘক্ষণ সুরক্ষা প্রদান করবে। একসাথে ঠোঁটের আর্দ্রতা বজায় রাখবে।

৫) ঠোঁটে সানস্ক্রিন লাগাতে ভুলবেন না। প্রতিদিন ঠোঁটে সানস্ক্রিন লাগান। এতে গোলাপি আভা চিরকাল বজায় রাখার জন্য পারবেন।

৬) শীতকালে প্রচুর বেশি পানি পিপাসা পায় না। তা সত্ত্বেও ঠোঁটকে শুষ্কতার হাত হতে রক্ষা করতে গেলে আপনাকে হাইড্রেটেড থাকতে হবে। তবেই ফাটা ঠোঁটের প্রবলেম রুখতে পারবেন।

৭) ঠোঁটের সৌন্দর্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর ডায়েটও জরুরি। রোজকার খাবার পাতে ভিটামিন, মিনারেল পুষ্ট খাবার রাখুন। বিশেষত, ভিটামিন এ স্বাস্থ্যকর গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

৮) ঠোঁট থেকে মরা কোষ দূর করা জরুরি। তবেই, শুষ্ক আবহাওয়ার মধ্যেও ঠোঁট থাকবে কোমল ও কোমল। নির্দিষ্ট টাইম হৃদয় এক্সফোলিয়েট করুন। চিনির সাথে সামান্য মধু মিশিয়ে ঠোঁটের উপর ঘষুন। অনেক বেশি চাপ দেবেন না। অতঃপর ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে ঠোঁট ধুয়ে ফেলুন। অতঃপর অবশ্যই লিপ বাম লাগিয়ে নিন। এতে ফাটা ঠোঁটের প্রবলেম সহজেই এড়াতে পারবেন।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন