রংপুরের অন্যতম বৃহৎ উপজেলা মিঠাপুকুর, ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে যার বিশাল ব্যাপ্তি। লক্ষ লক্ষ মানুষের এই আবাসভূমিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা হাজার হাজার মেধাবী শিক্ষার্থী যেমন এই উপজেলার গর্ব, তেমনি সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে কর্মরত আছেন আরও হাজার হাজার কর্মজীবী মানুষ। অথচ, এত অপার সম্ভাবনা থাকার পরও মিঠাপুকুর তার প্রাপ্য উন্নত জীবন থেকে আজও বঞ্চিত। পৌরসভার মর্যাদা না পাওয়ায় আধুনিক নাগরিক সুবিধা থেকে এখানকার মানুষ যুগ যুগ ধরে পিছিয়ে।
১৮৮৫ সালে থানা স্থাপিত হলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে দীর্ঘ ১৩৯ বছরেও মিঠাপুকুর পৌরসভার স্বীকৃতি পায়নি। এই দীর্ঘ বঞ্চনার মূলে রয়েছে প্রশাসনিক জটিলতা এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের উদাসীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতা। উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ একটি পৌরসভার মৌলিক নাগরিক সুবিধাগুলো থেকে এখানকার মানুষ দিনের পর দিন বঞ্চিত হচ্ছেন।
মিঠাপুকুরের এই বিপুল সংখ্যক মেধাবী শক্তিকে উপজেলার কল্যাণে সেভাবে কাজে লাগানো যায়নি। এর অন্যতম কারণ হলো এখানে একটি জোরালো বন্ধন বা সংহতির অভাব। স্বজনপ্রীতি ও নিয়োগ বাণিজ্যের কারণে এখানকার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান ক্রমশ নষ্ট হয়েছে। শুধু তাই নয়, সরকারি অফিসগুলোতেও দালাল চক্র এবং রাজনৈতিক প্রভাবের দৌরাত্ম্য প্রকট। অগণিত মেধাবী মানুষ এবং রংপুর শহরের কাছাকাছি ভৌগোলিক অবস্থান সত্ত্বেও মিঠাপুকুরের পিছিয়ে থাকার একটি বড় কারণ হলো, এখানকার অধিকাংশ মানুষ নিজেদের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন নন।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলি হয়ে একসময় হাজার হাজার শিক্ষার্থী বেকার হয়েছেন, যা এই জনপদের উন্নয়নের গতিকে শ্লথ করে দিয়েছে। এমনকি একসময় এই উপজেলা মাদকের অন্যতম আখড়ায় পরিণত হয়েছিল, যা সামাজিক অবক্ষয়কে আরও ত্বরান্বিত করেছে।
মিঠাপুকুরের এই বঞ্চনার চিত্র হতাশাজনক হলেও আশা ছাড়লে চলবে না। এখানকার মানুষের উচিত নিজেদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হওয়া। প্রতিটি নাগরিকের নিজ নিজ অবস্থান থেকে মিঠাপুকুর উপজেলাকে দ্রুত পৌরসভায় উন্নীত করার জন্য জোরালো দাবি তোলা এখন সময়ের দাবি। কেবলমাত্র সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই মিঠাপুকুর তার দীর্ঘদিনের বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন