বিলুপ্তির পথে দেশি মাছ: চায়না দুয়ারী জালের বিরুদ্ধে চাই সচেতনতা ও বিকল্প ব্যবস্থা!


নদীমাতৃক বাংলাদেশের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে দেশি মাছ। একসময় পুকুর, খাল, বিল, নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে দেশি মাছ দেখা যেত। কিন্তু এখন সেই দৃশ্য প্রায় বিরল। মাগুর, শিং, কই, পুঁটি, ট্যাংরা, মলাসহ অসংখ্য দেশি প্রজাতির মাছ আজ বিলুপ্তির পথে। আর এর পেছনে অনেক গুলো কারণ রয়েছে, বর্তমান সময়ে  অন্যতম বড় কারণ হলো এক নীরব ঘাতক-চায়না দুয়ারী জাল।

চায়না থেকে আমদানি করা এই নিষিদ্ধ ফাঁদ দেখতে অনেকটা মাছ ধরার চাইয়ের মতো, কিন্তু এর কার্যকারিতা অনেক ভয়ংকর। এই জালের ছোট ছোট ফাঁসে শুধু বড় মাছই নয়, ছোট পোনা মাছ এবং এমনকি মাছের ডিম পর্যন্ত আটকা পড়ে। ফলে মাছের বংশবিস্তার মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে, যা আমাদের মৎস্যসম্পদকে ঠেলে দিচ্ছে এক চরম সংকটের দিকে।

জীবিকার প্রয়োজনে, আইনের বিরুদ্ধেঃ


মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এই জালকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও এর ব্যবহার কমছে না। জীবিকার তাগিদে অনেক জেলে বাধ্য হয়ে এই জাল ব্যবহার করছেন। তারা জানেন এটি আইনবিরোধী, কিন্তু বিকল্প আয়ের অভাবে এই ক্ষতিকর পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ এই নির্বিচার শিকারের ফলে যে কেবল মাছের প্রজাতিই বিলুপ্ত হচ্ছে তা নয়, এটি দেশের জীববৈচিত্র্যকেও হুমকির মুখে ফেলছে। দেশের মানুষের প্রাণিজ আমিষের বড় উৎস দেশি মাছ, যা কমে গেলে ভবিষ্যতে পুষ্টিহীনতা দেখা দিতে পারে।

সমাধানের পথে আলোঃ


এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে হলে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। শুধু আইন প্রয়োগ করে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন:

১. সচেতনতা বৃদ্ধি: জেলে সম্প্রদায় এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে এই জালের ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে ব্যাপক সচেতনতা বাড়াতে হবে। মাছের পোনা এবং ডিম রক্ষায় এর ভয়াবহতা সম্পর্কে বোঝানো গেলে মানুষ নিজেরাই এর ব্যবহার বন্ধ করতে এগিয়ে আসবে।

২. বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা: দরিদ্র জেলেদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ, বিকল্প পেশার প্রশিক্ষণ, এবং সরকারি সহায়তার মাধ্যমে বিকল্প আয়ের সুযোগ তৈরি করতে হবে। এতে তারা এই অবৈধ জাল ব্যবহারের পরিবর্তে সম্মানজনক জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে।

৩. কঠোর আইন প্রয়োগ: নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারী জালের উৎপাদন, বিক্রি এবং বাজারজাতকরণ বন্ধে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। এই জাল তৈরির কারখানা বা আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিলে সরবরাহ কমে আসবে।

দেশি মাছ আমাদের প্রকৃতি ও অর্থনীতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। চায়না দুয়ারী জালের মতো ধ্বংসাত্মক ফাঁদ থেকে আমাদের মৎস্যসম্পদকে বাঁচাতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের খাদ্য ও জীববৈচিত্র্য এক বড় সংকটের মুখে পড়বে। এখনই সময়, এই আগ্রাসন রুখে দাঁড়ানোর।


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন