র‍্যাব ১৩ এর অভিযানে আদিতমারী ক্লুলেস হত্যা মামলার ৪ আসামী গ্রেফতার


লালমনিরহাটের আদিতমারী অঞ্চলে কুপিয়ে হত্যা করে অটো মিশুক ছিনতাই এর চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস ঘটনার রহস্য উন্মোচন এবং ৪জন আসামীকে গাজীপুর কোনাবাড়ি হতে র‌্যাব-১৩ ও র‌্যাব-১১ এর যৌথ অভিযানে গ্রেফতার।


গত ২১ আগস্ট ২০২৩ ইং তারিখ লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর এলাকায় ডাকাতপাড়া ব্রীজের নিচে ভেটেশ্বর নদীতে অটোমিশুক চালক ভিকটিম আঃ রাশিদ (৪৪) এর মৃতদেহ পাওয়া যায়। ঘটনাটি স্থানীয় তার সাথে জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হলে বিপুল চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ভিকটিমের ভাই আঃ রশিদ(৫২) জানায় ভিকটিমের ছোট পোলা আদিতমারি বুড়ির বাজারে মাদ্রাসায় পড়াশুনা করে। গত ২০ আগস্ট প্রতিদিনের মত ভিকটিম আঃ রাশিদ অটোমিশুক চালক তার ছোট ছেলের জন্য রাতের আহার নিয়ে থাকার জায়গা হতে মাদ্রাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয় তার সাথে মাদ্রাসায় ছোট ছেলেকে অন্ন পৌঁছে দেয়।


প্রতিদিন আঃ রাশিদ অটোমিশুক চালিয়ে রাত্রি ২/৩ ঘটিকার মধ্যে নিজ বাড়িতে ফিরে আসে কিন্তু ঘটনার দিন রাত্রে থাকার জায়গা ফিরে না আসায় তার ব্যবহৃত মোবাইলে ফোন করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। পরদিন ২১/০৮/২০২৩ ইং তারিখ প্রভাতকালে ভিকটিমের আত্মীয়-স্বজন মিলে ভিকটিমকে খোঁজা-খুঁজি শুরু করে এবং ভিকটিমের বৃহৎ পোলা সোশ্যাল যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) ভিকটিমকে খুঁজে না পাওয়ার ব্যাপারটা পোস্ট করলে আনুমানিক ১০.৩০ ঘটিকার টাইম জনৈক ব্যক্তি ফোন দিয়ে জানায় ডাকাতপাড়া ব্রীজের উপর রক্ত লেগে আছে তার সাথে ব্যবহারকৃত স্যান্ডেল ও লাল কাপড়ের অংশ বিশেষ পড়ে আছে।


পরবর্তীতে ভিকটিমের ভাই স্থানীয় উপজেলা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ভেটেশ্বর দরিয়া হতে ভিকটিম আঃ রশিদ (৪৪) এর মৃত দেহ উদ্ধার করে। পরবর্তীতে ভিকটিমের বিশাল ভাইয়া নিজে বাদী হয়ে ২১/০৮/২০২৩ ইং তারিখে আদিতমারি উপজেলার মামলা নং-১৫ তারিখ ২১/০৮/২০২৩, ধারা-৩৬৫/৩০২/৩৭৮/২০১/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০।এরই ধারাবাহিকতায়, র‌্যাব-১৩, রংপুর একটি চৌকস আভিযানিক টিম উল্লিখিত ঘটনার বিষয়ে রহস্যসন্ধানী খোজ শুরু করে। লুকানো সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-১৩, রংপুর গত ২৩/০৮/২০২৩ ইং তারিখ রাত ৯টায় র‌্যাব-১১ এর সহায়তায় গাজীপুর কোনাবাড়ী অঞ্চল থেকে ক্লুলেস হত্যা মামলার ০৪ জন আসামী ১। মোঃ সিরাজুল ইসলাম (১৬), পিতা-মোঃ মমিনুল ইসলাম, ২। মোঃ শামসুল হক @ বাবু (৩২), পিতা-মৃত মোন্তাজ আলী, ৩। মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান @ মুন্না (১৭), পিতা-আব্দুল মতিন তার সাথে ৪। মোঃ মোমিনুল ইসলাম (৪৫), পিতা-মোঃ নাজিম উদ্দীন সর্ব সাং-খারুভাজ (বালাপাড়া), থানা-আদিতমারি,জেলা-লালমনিরহাটদের’কে গ্রেফতার করেন।


প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায় যে, হেতু পরিকল্পনাকরী আসামী মোঃ সিরাজুল ইসলাম (১৬) এর পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক কর্মী আসামীদের সহযোগীতায় ঘটনার দিন গত ২০ আগস্ট ২০২৩ তারিখ রাত্রিতে আনুমানিক ০৯.৩০ এ বুড়িরবাজার হতে অটোমিশুক ভাড়া করে বাবুর বাজার যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা করে। পথিমধ্যে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ডাকাতপাড়া ব্রীজের ওপর আসামীগন প্রসাব করার কথা বলে অটোমিশুক থামাতে বলে। অটোমিশুক থামালে ছিনতায় এর উদ্দেশ্যে আসামী মোঃ শামসুল হক বাবু (৩২) ও মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান মুন্না (১৭) ভিকটিম এর সাথে ধস্তাধস্তি চালু করে এবং আসামী মোঃ সিরাজুল ইসলাম পিছন হতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ভিকটিমের মাথায় সজোরে আঘাত করলে ভিকটিম মোঃ আঃ রাশিদ (৪৪) পথে লুটিয়ে পড়ে।


ভিকটিমের নিকট থাকা টাকা পয়সা তার সাথে অটো রিক্সা নিয়ে ভিকটিমকে অর্ধ-মৃত সিচুয়েশনে ব্রীজের ওপর থেকে পানিতে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে অটোমিশুক নিয়ে মোস্তাফি মার্কেটপ্লেসে ভাঙ্গাড়ী দোকানে অটোমিশুক বিক্রি করতে গেলে দোকানদার কর্তৃক বৈধ কাগজ চাওয়ায় তারা মোস্তাফি মার্কেটপ্লেসে অটোমিশুক ফেলে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে আসামীগন পালিয়ে গাজীপুর কোনাবাড়ী এরিয়ায় অবস্থানরত আসামী মোঃ সিরাজুল ইসলামের আব্বা মোঃ মোমিনুল ইসলামের বাসায় আত্মগোপন করে এবং সেখান থেকেই তাদের গ্রেফতার করা হয়। উল্লেখ্য যে, গ্রেফতারকৃত আসামীরা আন্তঃ জেলা অটো মিশুক ছিনতাই  চক্রের সঙ্গে জড়িত যা সিরাজ গ্যাং নামে পরিচিত। তারা অত্র এলাকার বিভিন্ন অটো স্ট্যান্ডে অবস্থান করে যাত্রী বেশে অটোতে উঠে সুবিধাজনক স্থানে অটো চালককে জিম্মি করে কিংবা মারধোর করে অটো মিশুক ছিনতাই করে সেটি বিক্রি করে বিক্রয়লব্ধ টাকা ভাগাভাগি করে নেয়।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন