উত্তরবাংলা ২৪বিডি ডেস্কঃ
মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ব্যয় বাড়ছে। অফ হয়ে যাচ্ছে প্রায় ৭০ শতাংশ মোবাইল ফোন গ্রাহকের লাইকের তিন দিনের ইন্টারনেট প্যাকেজ।
তিন দিনের ইন্টারনেট প্যাকেজ বন্ধের সিদ্ধান্ত রবিবার (১৫ অক্টোবর) হতে কার্যকর করছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর অফিসিয়ালি ৩ ও ১৫ দিনের মোবাইল ফোন ইন্টারনেট প্যাকেজ বাতিলের ডিসিশন জানায় বিটিআরসি।
বিটিআরসির নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী- অপারেটররা শুধুমাত্র ৭ দিন, ৩০ দিন তার সাথে আনলিমিটেড ডেটা প্যাকেজ বিক্রি করতে পারবেন।
এতোদিন যারা ৫০ হতে ৬০ টাকার ভিতরে নানারকম অপারেটরের তিনদিন মেয়াদি প্যাকেজ কিনতেন, তাদের সবাইকে বাধ্য হয়েই ইদানিং ১৫০ থেকে ১৭০ টাকার সাতদিনের প্যাকেজ ক্রয় করে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হবে।
নিম্ন ইনকামের প্রচুর ইউজার বিদেশে থাকা তাদের প্রিয়জনদের সাথে এফবি মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ প্রভৃতি সোশ্যাল যোগাযোগ সাহায্যে কথা বলার জন্য ১টি সুনির্দিষ্ট টাইমে স্বল্পমেয়াদি ইন্টারনেট প্যাকেজ ব্যবহার করে।
আবার অনেক মানুষ স্থায়ীভাবে কর্মক্ষেত্রে ও বাসায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করলেও ইম্পোর্টেন্ট দরকারে স্বল্প মেয়াদের মুঠোফোন ইন্টারনেট প্যাকেজ ব্যবহার করেন। তারাও প্রবলেমে পড়বেন।
নতুন এই সিদ্ধান্তে মোবাইল ফোন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর পরিমান কমে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ ব্যপারে এক মোবাইল ফোন ইন্টারনেট ইউজার বলেন, আমি একজন শিক্ষার্থী। এই ডিসিশন সরাসরি ভাবে আমার ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর ইফেক্ট ফেলবে। আগে ৫৮ টাকায় দুই জিবি ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনতাম, তিনদিন চলতো। ইদানিং সাতদিন মেয়াদি প্যাকেজ কিনতে গেলে ১৬০ হতে ১৭০ টাকা খরচ হবে।
রাজধানীর এক মুঠোফোন রিচার্জের দোকানদার বলেন, ৪৪ হতে ৪৬ টাকারও কতিপয় প্যাক ছিল। এগুলো মূলত ছাত্র ও নিম্ন রোজগারের ব্যক্তি কিনতো। আমার নিকট রিকশাচালক ও স্বল্প বেতনের চাকরিজীবীরা এই প্যাকটি অধিক নিতো। ইদানিং নতুন ডিসিশন কার্যকর হলে অন্তত ১০০ টাকা খরচ বাড়বে এসব মানুষের।
অপারেটরদের অভিমত, বিটিআরসির এরূপ সিদ্ধান্তে নেগেটিভ ইফেক্ট পড়বে সরকারের রাজস্ব আয়ে। পাশাপাশি কম দামে ইন্টারনেট সার্ভিস না থাকায় নিন্ম ইনকামের মানুষ ডিজিটাল সার্ভিস হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে।
মোবাইল অপারেটর রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি কর্মকর্তা সাহেদ আলম বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে অপারেটর ভেদে ৬০ হতে ৭০ শতাংশ মোবাইল ফোন ফোন ব্যবহারকারী তিন দিন বা তারও কম মেয়াদের ইন্টারনেট প্যাকেজ ব্যবহার করে। এ সিচুয়েশনে প্যাকেজের পরিমান ৪০-এ বেঁধে দেয়া হলে, তা প্রায় ১২ কোটি গ্রাহকের পছন্দ অনুযায়ী প্যাকেজ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করবে। আমরা মনে করি, গ্রাহকের ব্যক্তিগত চাহিদা ও ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে প্যাকেজ পরিমান নির্ধারণে কোনো সময়সীমা থাকা সমীচীন নয়।
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা তাইমুর রহমান বলেন, ‘তিন দিনের ইন্টারনেট প্যাকেজ অফ করা হলে বহুসংখ্যক গ্রাহকের ওপর এর বিরূপ ইফেক্ট পড়বে। বাংলালিংকের ৪৮ শতাংশের অধিক ইউজার তিন দিনের প্যাকেজ ব্যবহার করে। এটা বন্ধ হলে ইউজারদের অধিক মূল্যের আদার্স প্যাকেজ কিনতে হবে। তারা সেই সময় অধিক ব্যয় করে সাত দিন বা ৩০ দিনের প্যাকেজ ব্যবহার করবে কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার কমিয়ে দিতে বাধ্য হবে। এই ডিসিশন সার্বিকভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারের বিস্তার কমিয়ে দেশে ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তিকে বিঘ্নিত করতে পারে।
মোবাইল ফোন অপারেটরদের এজেন্সি এমটব মহাসচিব লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ জুলফিকার বলেন, ‘মোবাইলের প্যাকেজ ডিজাইন করা হয় নানারকম স্তরের গ্রাহকের কথা মাথায় রেখে। কারণ একজন শিক্ষার্থী পক্ষান্তরে একজন নিম্ন ইনকামের মানুষের মোবাইল ফোন ব্যবহারের প্যাটার্ন আর একজন ব্যবসায়ীর মোবাইল ফোন ব্যবহার এক নয়। দেশের নিম্ন ইনকামের যে ৪৫ শতাংশ লোক এখনো মোবাইলের আওতায় আসেনি, তাদের এই সেবার ভিতরে নিয়ে আসতে চাই আমরা। এ জন্য তাদের উপযোগী বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ দরকার।
(তথ্য সূত্র সংগ্রহীত)
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন