বগুড়ায় ৬'শত সাঁকো তৈরির কারিগর জাহিদুল ইসলাম

উত্তরবাংলা ২৪বিডি ডেস্কঃ

বগুড়ায় ধলা মনের লোক বা সাঁকো বন্ধু বললেই এক নামে চেনে সবাই তাকে। উনি ঝামেলায় আপদে মানুষের মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দেন। কেবলমাত্র এইজন্য না ছোট দরিয়া বা খাল পারাপারের জন্য যিনি রাষ্ট্রের নানারকম প্রান্তে গিয়ে তৈরি করেছেন ৬০০ টিরও অধিক সাঁকো। রাস্তার ধারে লাগিয়েছেন এক লাখেরও অধিক তালবীজ।


বলছি বগুড়ার সোনাতলা থানার দিগদাইড় গ্রামের ৫৫ বছর বয়সী জাহিদুল ইসলাম মোল্লার কথা। তিনি ঐ গ্রামের মোবারক আলী মোল্লার ছেলে। শ্বেত মনের ব্যক্তি জাহিদুল কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এরই ভিতরে বিটিভির পপুলার ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ থেকে পেয়েছেন সম্মাননা ও ১টি মোটরসাইকেল।


জাহিদুল ইসলাম জানান, তার বয়স যখন ১০/১২ বছর সেই সময় প্রতিনিয়তই তাকে খাল পাড় হয়ে বিদ্যালয়ে যেতে হতো। নৌকা সময়মতো না থাকায় দুর্দান্ত যন্ত্রণা পেতে হয়েছে তাকে। শুধু এইজন্য না, তার মতো প্রচুর ছোট ছেলেমেয়েদেরও নৌকা পারাপারে অসুবিধা হতো। তখন উনি ভাবনা করলেন বাঁশ দিয়ে সাঁকো বানানোর। যেই কথা সেই কাজ। বড়দের সহযোগিতা নিয়ে বাঁশ দিয়ে প্রস্তুত করে ফেললেন সাঁকো। সেটিই ছিল তার ১ম সাঁকো তৈরি।


এরপর থেকেই তিনি এরিয়ায় পারাপারের অসুবিধা যেখানেই হতো সেখানেই গিয়ে বড়দের সহযোগিতা নিয়ে সাঁকো তৈরি করতেন। প্রায় ৪৫ বছরের সাঁকো তৈরির জীবনে তিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে ৬০০ অধিক সাঁকো তৈরি করেছেন।


জাহিদুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘সাঁকো তৈরি করার জন্য করতে বিভিন্ন জায়গায় পরিচিতি পাই। আজকাল প্রচুর জায়গায় সাঁকোর প্রয়োজন হলে আমাকে সংবাদ দেয়। বিনা পারিশ্রমিকে আমি গিয়ে সাঁকো প্রস্তুত করে দিয়ে আসি। অনেক মুছে মুছে থেকে আমাকে ডাকে এ কাজে। তারা মূলত অনুপ্রেরণা পেতে ডাকে। আমি গিয়ে গ্রাম ঘুরে ঘুরে সামর্থ্যবানদের থেকে বাঁশ, কাঠ কালেক্ট করে সাঁকো তৈরির কাজ করি। সাঁকো তৈরিতে মানুষের সাময়িক দুঃখ লাঘব হয়। অতঃপর তা যখন কর্তৃপক্ষের নজরে আসে সেই সময় তারা ওই স্থান ব্রীজ সৃষ্টি করে দেয়’।


মানুষের পারাপারের দুঃখ দুর্ভোগের কথা শুনলেই জাহিদুল তার পুরোনো সাইকেল নিয়ে কাধে দুইটা লম্বা বাঁশ নিয়ে চলে যান সাঁকো তৈরির কাজে। বিভিন্ন এরিয়ায় যখন ব্যক্তি তাকে সাঁকো বন্ধু জাহিদুল বলে চিনতে আরম্ভ করলো। তখনি তিনি নজরে আসলেন রাষ্ট্রের কিংবদন্তি উপস্থাপক হানিফ সংকেতের। অতঃপর উনি জাহিদুলকে নিয়ে গেলেন রাষ্ট্রের সনামধন্য ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদিতে’। তার কাজের গতি বাড়াতে তাকে উপহার দিলেন একটি মোটরসাইকেল।


শুধু যে উনি সাঁকো বন্ধু তা নন। উনি একজন সমাজ সচেতন বৃক্ষপ্রেমীও বটে। তাইতো তিনি বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মসজিদের রাস্তাসহ বিভিন্ন সড়কের ধারে এক লাখের বেশি তালের বীজ রোপন করেছেন।


জাহিদুল ইসলাম বলেন,‘গ্রামে একটা প্রবাদ আছে, যাই গারে (রোপন) তাল, তার নাতি খায় তাল’। কথাটা নির্ভুল না। নিজে তাল বীজ রোপন করলে সময় লাগলেও নিজের জীবদ্দশায় তাল খেয়ে যেতে পারবেন। তাল পর্যাপ্ত উপকারী। বজ্রপাত থেকেও আমাদের রক্ষা করে। এজন্য আপনারাও সুযোগ পেলে তাল বীজ রোপন করবেন’।


জাহিদুল ইসলাম সম্প্রতি সোনাতলার পুগলিয়া গ্রামের এক মসজিদে যাওয়ার জন্য মুসল্লিদের জন্য সাঁকো তৈরি সমাপ্ত করলেন। জানা যায় দুইশো বর্ষের বেশি পুরোনো এ মসজিদে প্রচুর ব্যক্তি নামাজ উশুল করে। কিন্তু সেখানকার যাতায়াতের পথ ভেঙে যাওয়ায় চলাচলে অসুবিধা হয়। তাই গ্রামবাসীরা জাহিদুল ইসলামকে সংবাদ দিলে তিনি এসে সাঁকো সৃষ্টি করে দেন।


দিগদাইড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল হক টুল্লু জানায়, ‘জাহিদুল আমাদের গ্রামের ছেলে। ছোটবেলা থেকেই সে সৎ। গ্রামের মানুষের বিপদে আপদে তাকে সাইডে পাওয়া যায়। গ্রামের মানুষের যাতায়াতের জন্য অসংখ্য সাঁকো সৃষ্টি করে দিয়েছেন’।


জাহিদুল ইসলামের বাসনা তিনি শেষ জীবন পর্যন্ত মানুষের সেবার জন্য কাজ করে যেতে চান। তিনি জানিয়ে দেন দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে তাকে ডাকলে উনি ছুটে যাবেন মানুষের সেবায় তার সাথে তা বিনা পারিশ্রমিকে।।

(তথ্য সূত্র সংগ্রহীত)

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন